বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রা:বি) অভ্যান্তরে অনলাইন পোর্টাল অফিস ভাড়া দিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে প্রতারণা ও ব্লাকমেইল করছে একটি চক্র। তবে লোক মুখে শোনা গেলেও ঘটনাটি এবার প্রাকাশ্যে এসেছে। ওই প্রতারক চক্রের তিন সদস্যের নামে পণ্যগ্রাফি ও নারীশিশু নির্যাতন দমন আইনে চন্দ্রিমা থানা ও মতিহার থানায় পৃথক পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী দুই যুবতী।
এরমধ্যে, রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানায় এক যুবতী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তিনি ওই থানার জামালপুর এলাকার সুরুজ মিয়ার মেয়ে। চন্দ্রীমা থানার মামলা নাং- ১৬, তারিখ ২১/০২/২০৩, ধারা- ২০০০ সালের নারী ও শিশু আইন নির্যাতন (সংশোধনী- ২০০৩, ২০২০) এর ১০ সহ পেনাল কোড ১৪৩/৪৪৮/৫০৬ তৎসহ পর্ণগ্রাফি আইন ২০১২ এর ৮(১/৮(৩)। মামলার আসামীরা হলো: দূর্গাপুর থানার চককৃষ্ণপুর গ্রামের মোঃ ইব্রাহিম সরদারের ছেলে মোঃ ইমদাদুল হক (৩৯), নগরীর মতিহার থানাধীন কাজলা মৃধাপাড়া এলাকার মোঃ সামশুর রহমান কান্দুর ছেলে রাফিকুর রহমান লালু (৫০), (সে দৈনিক অধিকার পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থাকে) ও চন্দ্রীমা থানাধীন চন্দ্রীমা আবাসিক এলাকার মোঃ সেলিম রেজার ছেলে মোঃ সোহাগ আলী (২০) সহ অজ্ঞাত ৩/৪জন।
অপর মামলাটি দায়ের করেছেন আরেক যুবতী(২৯), তিনি মহানগরীর রাজপাড়া থানাধীন লক্ষীপুর ভাটাপাড়া এলাকার মোঃ নাসিরুদ্দিনের মেয়ে। মতিহার থানার মামলা নং-১৯, তারিখ ২২/০২/২০২৩, ধারা- ১০, নারী ও শিশু নির্যাতন আইন (সংশোধনী- ২০২০) তৎসহ ৩২৩/৫০৬ পেলান কোড ১৮৬০।
মামলার আসামীরা হলো: দূর্গাপুর থানার চককৃষ্ণপুর গ্রামের মোঃ ইব্রাহিম সরদারের ছেলে মোঃ ইমদাদুল হক (৩৯), নগরীর মতিহার থানাধীন কাজলা মৃধাপাড়া এলাকার মোঃ সামশুর রহমান কান্দুর ছেলে রাফিকুর রহমান লালু (৫০)সহ অজ্ঞাত ৩/৪জন।
চন্দ্রিমা থানার ভুক্তভোগী মামলার বরাত দিয়ে জানা যায়, গত (২ ফেব্রুয়ারী) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজ ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন ওই যুবতী। সে সময় তার প্রতিবেশী আন্টি মোসাঃ খালেদা আক্তার তার ঘরের দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকেন। ওই সময় ঘরের দরজা খোলা মাত্র প্রতিবেশী আন্টি তাকে বলে আমার ছেলে দুর্জয় খান (২৬) তোমাদের বাড়ীতে আছে? এই কথা বলা মাত্রই প্রতারক ও ব্লাকমেইলার ইমদাদ, লালু ও তার সহযোগী সোহাগ আলী সহ অজ্ঞাত ২/৩ জন ব্যক্তি অনুমতি ছাড়াই বাড়ির ভেতর ঢুকে এবং তার শয়নকক্ষে প্রবেশ করে তাদের হাতে থাকা ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন দিয়ে তার শরীর অপ্রস্তুত থাকা অবস্থায় ভিডিও ধারণ করে। এসময় তারা হুমকী দিয়ে বলে তোমার এই ভিডিও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ছেড়ে দেব এবং বলে স্বিকার কর তোমার এবং দুর্জয়ের দুইজনের বিবাহ হয়েছে। বিয়ের কাবিননামা বাবদ ৫ লক্ষ টাকার অপ্রসাঙ্গীক মিথ্যা ও বানোয়াট কথা ক্যামেরার সামনে বলতে বলে। তাদের কথায় সে রাজি না হলে তারা ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে এবং কুপ্রস্তাব দেয়। ভুক্তভোগী যুবতী প্রতিবাদ করলে ইমদাদুল হক বেশ্যা বলে গালি দেয় এবং হাত ধরে টানাটানি করে। চলে যাওয়ার সময় তারা ভিডিও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকী দেয়। এরপর (২০ ফেব্রæয়ারী) রাত ৯:৪৪ মিনিটে অনলাইন সংবাদ চলমান নামক অনিবন্ধিত টিভি চ্যানেল পোর্টালে জোরপূর্বক ক্যামেরায় ধারনকৃত ভুক্তভোগী যুবতীর অপ্রস্তুত শরীরের ভিডিও সহ তার কথা এডিট করে মানহানীকর সংবাদ প্রচার করে। ওই সংবাদে ভুক্তভোগীরা কুকর্ম ও প্রতারনা করে বলে মানহানীকর তথ্য প্রচার করা হয়। যাহা বিভিন্ন মোবাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখতে পায় তারা। পরে ভ‚ক্তভোগী যুবতী বাদী হয়ে চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
অপর দিকে ভুক্তভোগী যুবতীর মামলার বরাত দিয়ে জানা যায়, গত (১০ জানুয়ারী) মতিহার থানাধীন কাজলা রা:বি গেট সংলগ্ন পূর্বপার্শ্বে সিয়ামুন চাইনিজ এন্ড রেষ্টুরেন্টের নীচতলায় অবস্থিত (ভাড়া অফিস) সংবাদ চলমান নামক অনলাইন পোর্টালে স্টাফ রিপোর্টার পদে যোগদান করি। ২০ দিন কাজ করার পর আমি বুঝতে পারি এরা চাঁদাবাজ এবং মেয়ে স্টাফদের কুপ্রস্তাব দেয়। আমি ইমদাদের গতিবিধি বুঝতে পেরে চাকুরী থেকে অব্যাহতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে সে বিভিন্ন ধরনের কুৎসা রটানো শুরু করে। এরপর গত (২ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১২টার দিকে ওই অফিসে কার্ড জমা দিতে গেলে ইমদাদ আমাকে জড়িয়ে ধরে শ্লীলতাহানী করে। আমি রেগে গেলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। কিছুক্ষন পর আমার সহকর্মী মোঃ দুর্জয় খান (২৬) অফিসে আসলে তাকে ভয়ভীতি দেখায় এবং প্রতারক এমদাদ ও লালু আমার সাথে তার অনেকদিন সম্পর্ক আছে বলে স্বিকারোক্তি দিতে বলে। এরপর দুর্জয় খানকে ইমদাদ লোহার রড দিয়ে বাম হাতে আঘাত করে এবং আমাদেরকে হুমকি ধামকি দিয়ে একে অপরের নামে আজেবাজে স্বিকারোক্তি নেয়। সেই স্বিকারোক্তি ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। পরে অফিস থেকে বের হওয়ার পর সাংবাদিক মহলে ওই যুবতীর নামে কুৎসা রটনা শুরু করে। যার ফলে আমার স্বাভাবিক জীবনে চলাফেরা করা কষ্ট হয়ে পড়েছে। এছাড়াও ইমদাদের সাঙ্গপাঙ্গরা প্রতিনিয়তই আমার পিছু নিচ্ছে। এজন্য আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই মর্মে ভুক্তভোগী যুবতী মতিহার থানার মামলা দায়ের করেন।
একাধিক স্থানীয়রা জানায়, উত্তর বঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রা:বি) যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উচ্চ শিক্ষা নিতে আসেন হাজার হাজার শিক্ষর্থিরা। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতর মতিহার থানাধিন কাজলা রা:বি গেইটের মধ্যে রয়েছে সিয়ামুন চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট। সেই রেষ্টুরেন্টের মালিক ঘর ভাড়া দিয়েছেন ইমদাদুল হককে। ঘর ভাড়া নিয়ে সংবাদ চলমান নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল খুলে দীর্ঘ দিন ধরে চালাচ্ছে প্রতারক ইমদাদ ও তার সহসযোগীরা। সে আবার নিজেই সেই পোর্টালের প্রকাশক ও সম্পাদক।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম পারভেজ জানান, ভুক্তভোগী যুবতী বাদী হয়ে গত (২১ ফেব্রুয়ারী) নারী ও শিশু আইন নির্যাতন ও পর্ণগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নাং- ১৬। মামলার আসামী ইমদাদুল হক, লালু ও সোহাগকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী যুবতী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মতিহার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-১৯। মামলার আসামী ইমদাদুল হক ও লালুকে গ্রেফতার অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
রাবি অভ্যান্তরে অনলাইন পোর্টাল অফিস খুলে প্রতারণা করছে ইমদাদ ও লালু-সহ একটি চক্র। তাদের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তারপরও বহিরাগতরা রা:বি অভ্যান্তরে থেকে চালাচ্ছে প্রতারণা। বিষয়টি অবগত করা হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি), উপাচার্জ (ভিসি) বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। মামলার কপি এবং অভিযোগ প্রক্টর সাহেবের কাছে জমা দিবেন।
একই বিষয়ে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে (রা:বি) প্রক্টর প্রফেসর মোঃ আশাবুল হক জানান, মামলার কপি এবং অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।